পেট্রোবাংলার বিস্তারিত সবকিছু

 #পেট্রোবাংলার_খুটিনাটি 

#পোস্ট_নং_০২ 

২০২২ সাল গ্যাস সেক্টরের একটি কোম্পানিতে যোগদানের পূর্বে পুরো সেক্টর নিয়ে কিছুটা আইডিয়া নিয়েছিলাম। তার উপর ভিত্তি করে আজকের এই আলোচনা

পেট্রোবাংলার বিস্তারিত -২

#কোম্পানি_ও_ধরণ

পেট্রোবাংলা এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠান ১৩ টি যা নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা যায়।

(ক) গ্যাস জেনারেশন

(১) বাপেক্স

(২) বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড

(৩) সিলেট গ্যাস ফিল্ড

উল্লেখ্য যে বাপেক্স গ্যাস জেনারেশন এর পাশাপাশি গ্যাস অনুসন্ধান এর দায়িত্বপ্রাপ্ত একমাত্র দেশীয় প্রতিষ্ঠান


(খ) গ্যাস ট্রান্সমিশন

(১) জিটিসিএল


(গ) গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন

(১) তিতাস গ্যাস

(২) বাখরাবাদ গ্যাস

(৩) কর্ণফুলী গ্যাস

(৪) জালালাবাদ গ্যাস

(৫) পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস

(৬) সুন্দরবন গ্যাস


(ঘ) মাইনিং ও এলএনজি

(১) বড়পুকুরিয়া

(২) মধ্যপাড়া

(৩) রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস


উল্লেখ্য যে কোম্পানিগুলোর পুরো নাম এবং শর্ট নাম ভালোভাবে জেনে নিবেন। ভাইভাতে প্রায়ই এর প্রশ্ন করা হয়। ভাইভাতে কোম্পানির নাম ভুল করা মারাত্মক অপরাধ। 


যেমন বাখরাবাদ এর পরীক্ষার সময় অনেকে বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ড বলেন যা ভুল। বাখরাবাদ কোন গ্যাস ফিল্ড না। ভাইভাতে পেট্রোবাংলা এর আওতাধীন কোম্পানি কয়টি ও কি কি প্রশ্ন করলে উপরের বিভাজন অনুসারে উত্তর করবেন। ইনশাআল্লাহ বোর্ড খুশি হবে।


#এলাকাভিত্তিক_বিভাজন

এখানে পোস্টিং হবার বেশি সম্ভাবনা বিবেচনায় বিভাজন দেয়া আছে। উল্লেখ্য যে এর বাইরেও পোস্টিং হতে পারে।


(১) পেট্রোবাংলা (কারওয়ান বাজার, ঢাকা)

(২) বাপেক্স (কারওয়ান বাজার, ঢাকা)

(৩) বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড (বি. বাড়িয়া)

(৪) সিলেট গ্যাস ফিল্ড (হরিপুর, সিলেট)

(৫) তিতাস (ঢাকা ও এর আশে পাশে)

(৬) বাখরাবাদ (কুমিল্লা)

(৭) কর্ণফুলী (ষোলোশহর, চট্রগ্রাম)

(৮) জালালাবাদ (মেন্দিবাগ, সিলেট)

(৯) পশ্চিমাঞ্চল (নলকা, সিরাজগঞ্জ)

(১০) সুন্দরবন (সোনাডাঙ্গা, খুলনা)

(১১) বড়পুকুরিয়া (পার্বতীপুর, দিনাজপুর)

(১২) মধ্যপাড়া গ্রানাইট (মধ্যপাড়া, দিনাজপুর)

(১৩) রূপান্তরিত (খিলক্ষেত, ঢাকা। কক্সবাজার)

(১৪) জিটিসিএল (আগারগাও, ঢাকা)


#ঢাকায়_পোস্টিং

ঢাকায় পোস্টিং পেতে চাইলে চয়েজে রাখতে পারেন পেট্রোবাংলা, তিতাস, বাপেক্স, জিটিসিএল, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস এই ৫ প্রতিষ্ঠানকে।


উল্লেখ্য যে পেট্রোবাংলা এর বিল্ডিং এ সকল কোম্পানির লিয়াজো অফিস আছে বাট এগুলায় ১-৫ জনের বেশি লোক লাগে না বিধায় পোস্টিং পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।


#পেনশন

আলোচিত কোম্পানিগুলোর মধ্যে পেনশন সুবিধা চালু আছে (১) পেট্রোবাংলা (২) তিতাস (৩) বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড (৪) সিলেট গ্যাস ফিল্ড (৫) বাপেক্স


নিচে আমরা গ্যাস সেক্টরের ৩ টি মূল আকর্ষণ আলোচনা করবো যা (১) ইনসেন্টিভ বোনাস (২) এক্স গ্রেসিয়া (৩) প্রফিট শেয়ার।

উল্লেখ্য যে পোশাক ভাতার নীতিমালা একেক কোম্পানিতে একেক ধরণের হওয়ায় আলোচনার বাইরে রাখা হলো।


#ইনসেন্টিভ_বা_এপিএ_বোনাস

প্রতিটি কোম্পানি প্রতি বছর মন্ত্রনালয় এর সাথে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে চুক্তি করে যা এপিএ বা এনুয়াল পারফরমেন্স এগ্রিমেন্ট বলা হয়। উদাহরণ হিসেবে ধরেন তিতাস এগ্রিমেন্ট করলো যে সিস্টেম লস ৮% এ নামিয়ে আনবে। এমন আরো অনেক ক্যাটাগরি থাকে। মোট মার্কিং হয় ১০০ এর উপর। ১০০ তে কোম্পানিগুলা যা অর্জন করে তার উপর বেজ করে ইনসেন্টিভ বা এপিএ বোনাস দেয়া হয়। 


প্রাপ্ত স্কোরের উপর বেইজ করে এটা বেসিকের ০.৫/.০৭৫/১/১.২৫/১.৫/২ হতে পারে। মানে এটা নির্দিষ্ট না। যেই কোম্পানি স্কোর বেশি করবে সে বেশি পাবে। এটা সর্বোচ্চ ২ বেসিক হয় (বেশি হয় কিনা আমার জানা নেই)।


ইনসেন্টিভ বোনাস যে দিতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। কোম্পানি চাইলে যেকোন সময় এটা না দিতে বা বন্ধ করে দিতে পারে।


#এক্সগ্রেসিয়া

সবাই ইনসেন্টিভ আর এক্স গ্রেসিয়াকে একই ভাবে যা আমিও এই সেক্টরে আসার আগে মনে করতাম। বাট দুটো একদমি আলাদা জিনিস।


ইনসেন্টিভ এপিএ স্কোরের উপর ভিত্তি করে দেয়া হয় আর এক্স গ্রেসিয়া দেয়া হয় প্রকল্প বা কোনো কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন করার জন্য প্রণোদনা হিসেবে।


ইনসেন্টিভ কয়টা হবে তা স্কোরের ভিত্তিতে মন্ত্রনালয় থেকে ঘোষিত হয়। এক্স গ্রেসিয়া পুরোপুরি কোম্পানির বোর্ডের উপর নির্ভর করে (মন্ত্রনালয় এর ছাড়পত্র নেয়া লাগে কিনা তা আমার জানা নেই)। এক্স গ্রেসিয়া বেসিকের উপর ১-৪ গুন বা তারো বেশি হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে ধরেন কর্ণফুলী গ্যাস এর এজিএম সফল ভাবে আয়োজিত হওয়ায় সকল এমপ্লয়িদের ২ বেসিক এর সমান এক্স গ্রেসিয়া দেয়া হলো।


উল্লেখ্য যে এক্স গ্রেসিয়া ফিক্সড কোনো বেনিফিট না। কোম্পানি চাইলে এটা না দিতে পারে বা একদম বন্ধ করে দিতে পারে।


#প্রফিট_শেয়ার

গ্যাস সেক্টরের মূল আকর্ষণ এটা। মূলত এটা বেসিকের উপর ভিত্তি করেনা বলে সবাই সমান এমাউন্ট পায়। মানে প্রতিষ্ঠানের এমডি যদি ১০ টাকা পায় তাহলে পিয়নও ১০ টাকাই পাবে। প্রফিট শেয়ার কেবল স্থায়ী এমপ্লয়িদের দেয়া হয়। আউটসোর্সিং করে যে লোক নেয়া হয় তারা এর আওতায় আসেনা।


আপনাকে অনেকে অনেক কথা বলতে পারে বাট আজকে আপনাকে ক্যালকুলেশন দেখিয়ে দিবো যেনো কাউকে আস্ক বা ট্রাস্ট করতে না হয় এই বিষয়ে।


কোম্পানির আয়ের (খুব সম্ভবত অপারেটিং ইনকাম) ৫% সকল ইমপ্লয়ির মধ্যে সমানভাগে দেয়া হয় প্রফিট শেয়ার হিসেবে। পার পারসন কতো পাবে তা জানার জন্য আপনি কোম্পানির এনুয়াল রিপোর্ট এ যাবেন। ইনকাম স্টেটমেন্টে WPPF (Workers Profit Participation Fund) এর ফিগার নিবেন। সেটার ৮০% করে প্রাপ্ত রেজাল্ট কে নাম্বার অফ ইমপ্লয়ি (স্থায়ী লোকসংখ্যা ধরবেন। আউটসোর্সিং বিবেচনা হবেন) দিয়ে ভাগ করলে প্রত্যেকে কতো করে পেয়েছে তা জানতে পারবেন।


উদাহরণ হিসেবে ধরেন WPPF এ ১০০ টাকা আছে আর ঐ বছরে ৮ জন স্থায়ী লোক আর ৫ জন আউটসোর্সিং করা লোক কোম্পানিতে কর্মরত ছিলো। তাহলে প্রত্যেকে পেয়েছিলো

(১০০*৮০%)/৮= ১০ টাকা করে।


মনে রাখতে হবে যে প্রফিট শেয়ার কোনো ফিক্সড সুবিধা নয়। এটা সাধারণত প্রতি বছরেই কমতে থাকে (কারণ প্রতি বছর নাম্বার অফ ইমপ্লয়ি বাড়ে আবার অপারেটিং কষ্ট বাড়ায় অপারেটিং প্রফিট কমে)। 


আবার কোম্পানি যদি লসে থাকে (অপারেটিং লস) তাহলে প্রফিট শেয়ার পাবেন না। নাম্বার অফ ইমপ্লয়ি যদি বাড়ে অথবা গ্রস প্রফিট যদি কমে তাহলে প্রফিট শেয়ার কমতে থাকে। এইজন্য নতুন লোক নেয়া হলে তা পুরাতন লোকেরদের জন্য খারাপ খবর হয় কারণ পার পারসন প্রফিট শেয়ার কমতে থাকে।


প্রফিট শেয়ার বেশি দেয় এমন ৩ টা কোম্পানি হচ্ছে 

(১) সুন্দরবন গ্যাস

(২) কর্ণফুলী গ্যাস

(৩) পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস


এদের মধ্যে সুন্দরবন গ্যাসের টাকা বেশি হবার কারণ হচ্ছে তাদের আউটসোর্সিং করা জনবল বেশি। কর্ণফুলীর প্রফিট শেয়ার কমছে কারণ লাস্ট ব্যাচে প্রায় ১০০+ নেয়া হয়েছে। আর তাদের ১০০+ স্টাফ নিয়োগ পেন্ডিং আছে।


বর্তমানে তিতাসের প্রফিট শেয়ার অনেক কমে গেছে। যার কারণ তিতাসের বড় এমপ্লয়ি বেইজ।


যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রফিট শেয়ার বেশি হয় আর আউটসোর্সিং করা লোক কম হয় তাহলে বুঝে নিবেন যে সেখানে কাজের চাপ বেশি হবে কারণ কম লোক দিয়ে চালানো হচ্ছে।


উল্লেখ্য যে লোকমুখে শোনা যায় যে বড়পুকুরিয়া সবথেকে বেশি প্রফিট শেয়ার করে। বড়পুকুরিয়া এর এনুয়াল রিপোর্ট পাওয়া না যাওয়ায় উক্ত তথ্য ভেরিফাই করা সম্ভব হয়নি।


পরিশেষে কিছু #ব্যক্তিগত_মতামত

(১) গ্যাস সেক্টরের প্রফিট শেয়ার, এক্স গ্রেসিয়া, ইনসেন্টিভ এসব ফিক্সড বেনিফিট না। সবসময় পাবেন বা সমান পাবেন এমন আশা করা উচিত না।


(২) কোম্পানিগুলো পাওয়ার সেক্টরের মতো স্বতন্ত্র পে স্কেলে যাওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্য সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। মূলত আগের ইমপ্লয়িরা স্বতন্ত্র চায় না। ফলে এটা হবে কিনা বা কবে হবে তা পুরো আন্সারটেইন। 


গ্যাস সেক্টরের তুলনায় পাওয়ার সেক্টরের এডভান্টেজ এইখানে। কারণ অন্য সুবিধা বন্ধ করা গেলেও বেতন আর ভাতা বন্ধ বা কমানো যায় না।


(৩) স্বতন্ত্র স্কেলে গেলে পেনশন সুবিধা চলে যাবে (এইজন্য অনেকে চায় না স্বতন্ত্র স্কেল হোক)। এক্স গ্রেসিয়াসহ অন্যান্য অনেক সুবিধা পরিবর্তন বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।


(৪) ব্যক্তিগত ভাবে আমি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলোতে জব করার জন্য বলবো।


(৫) গ্যাস শেষ হয়ে গেলে কি হবে? এই প্রশ্নের বিভিন্ন উত্তর হতে পারে (পজিটিভ আর নেগেটিভ দুটোই) তাই এটা বিবেচনা করার প্রয়োজন আপাতত নেই। ইনশাআল্লাহ আমরা সাগর থেকে সামনে গ্যাস পাবো। তবে রিস্ক ফ্রি চাইলে জেনারেশন কোম্পানি গুলো পছন্দের শেষে রাখতে পারেন।


(৬) বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড আর সিলেট গ্যাস ফিল্ডের ওয়ার্ক ইনভারমেন্ট ভালো বলে শুনেছি।


(৭) যদি সামনে এলএনজি এর উপর ফোকাস বাড়ানো হয় তাহলে রূপান্তরিত গ্যাস ভালো করবে।


(৮) স্পেসিফিক কোনো কোম্পানির ব্যাপারে জানার জন্য উক্ত কোম্পানিতে জব করে এমন কাউকে আস্ক করা উচিত। তাহলে একদম পরিপূর্ণ আইডিয়া পাবেন।


(৯) যারা সুদভিত্তিক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে থাকতে চান তাদের জন্য গ্যাস সেক্টর খুব ভালো জায়গা হবে ইনশাআল্লাহ।


(১০) সাব্জেক্টিভ প্রস্তুতির জন্য শর্টকাট না খুজে বেসিক বইগুলো থেকে নিজের বেসিক ডেভেলপ করুন। এইসব জব পাওয়ার জন্য আলাদাভাবে কোচিং করা বা পেইড ব্যাচে পরীক্ষা দেয়ার কোনো প্রয়োজন হয়না। 


কোচিং বা পরীক্ষা দেয়া ব্যতীত নিজেই প্রবলেম সলভ করা বা পড়াশুনা করার চেস্টা করুন। খোজ নিয়ে দেখুন যারা জব করে তাদের কয়জন কোচিং করে বা পেইড ব্যাচে পরীক্ষা দিয়ে জব পেয়েছে। সংখ্যাটা কম হওয়াই উচিত।


এক্সামের পড়াশুনাকে জব লাইফের সাথে কম্পেয়ার করুন। জবের ভেতরেও অনেক কাজ বা প্রব্লেম সলুশন নিজ থেকেই করা লাগবে। সেগুলোর জন্য কোচিং তো আর করতে পারবেন না। তাই আগে থেকেই স্ব-উদ্যোগি হবার চেষ্টা করুন।


(১১) জেনারেল অংশের জন্য বাজার থেকে যেকোনো বই কিনে পড়তে পারেন (২-৩ টা দেখে যেটা ভালো লাগবে কিনবেন)


(১২) কোনো সাজেশন ফলো না করাই ভালো। সাজেশন ফলো করার মানে নিজেকে একটা নির্দিষ্ট সার্কেলের ভেতর আবদ্ধ করে ফেলা। 


জব এক্সামের কোনো সিলেবাস বা নির্দিষ্ট প্যাটার্ন হয়না তাই সাজেশন ফলো না করে ডিটেইল প্রস্তুতি নিন। যতো জানবেন ততো এগিয়ে থাকবেন। ২-৩ মাস ভালো করে নিজের মতোন করে পড়লে ইনশাআল্লাহ বেশ ভালো ফাউন্ডেশন হবে।


পরিশেষে বলবো উপরের সম্পূর্ণ আলোচনা আমার ব্যক্তিগত। ভুল থাকতেই পারে তাই আলোচনার উপর বিশ্বাস না করাই উচিত বা করলে নিজে যাচাই করে করবেন। পোস্ট ভালো না লাগলে বা দ্বিমত থাকলে তর্ক না করে এভয়েড করবেন।


কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন। আমার নলেজে থাকলে জানানোর চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। সবার জন্য দোয়া আর শুভকামনা রইলো।


Md. Hafizur Rahman

AM, WZPDCL

EX-AM, KGDCL

EX-AM, RPGCL

Gold Medalist, IBB

EX-FA, RBL

EX-MTO, SO, OBL

Post a Comment

0 Comments