অনার্স পড়ুয়াদের ক্যারিয়ার ভাবনা
সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি শুনতে পাই তা হলো- অনার্সে থাকাকালীন চাকুরির পড়াশোনা করা উচিত কিনা ?
এর উত্তর একবাক্যে - না । আপনার সুন্দর ক্যাম্পাস লাইফটা এভাবে নষ্ট করবেন না । ক্যাম্পাস লাইফ নিজের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের জায়গা, মানুষ চেনার জায়গা, নতুন নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জায়গা । বিশ্বাস করুন এই অভিজ্ঞতাই আপনাকে ভবিষ্যতের মহাযুদ্ধে এগিয়ে রাখবে ।
অনার্সে থাকাকালীন কি করলে আপনার ভবিষ্যতে চাকুরি পাওয়া সহজ হবে
##
একাডেমিক পড়াশোনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন । ভালো সিজিপিএ আপনার জন্য গুড লেটার অফ রিকমেন্ডেশন হবে । আপনি স্কুল জীবন থেকে ভার্সিটি কখনো ঠিকমতো পড়াশোনা করেননি আর ভাবছেন যে সিজিপিএর কোনো ভ্যালু নাই, তাহলে ভুল ভাবছেন । এসব সস্তা মোটিভেশনে আকৃষ্ট হবেন না ।
তবে যাদের জীবনে ভালো কিছু করার ইচ্ছা কিন্তু যেকোনো কারনেই সিজিপিএ কম তাদের টেনশন করার কিছু নেই । আপনি আপনার চেষ্টা দ্বারাই সফল হবেন কোনো সন্দেহ নাই ।
আপনার বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের উপরেই বিসিএস টেকনিক্যাল ক্যাডারের লিখিত ২০০ মার্ক ও ভাইভা হয় । অনার্সে ফাকি দিলে পরবর্তীতে এগুলো নতুন করে পড়তে অনেক কষ্ট হবে । সাবজেক্ট নলেজ ও প্রাকটিক্যাল নলেজ বৃদ্ধি করুন, শিট-বই সংরক্ষণ করুন, কাজে আসবে ।
##
বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠন করুন, খেলাধুলা করুন, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিন । সুস্থ ধারার যা যা এক্টিভিটিস আছে সব করবেন । এসব অভিজ্ঞতা আপনাকে আর দশজনের থেকে এগিয়ে রাখবে ।
##
নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করতে হবে । চোখ কান খোলা রাখতে হবে । দেশ বিদেশের ঘটনাবলি সম্পর্কে যত জ্ঞান রাখতে পারবেন চাকুরির মহাযুদ্ধে তত উপকার পাবেন ।
##
অবসর সময় বিখ্যাত লেখকদের গ্রন্থ, উপন্যাস, কবিতা পড়ুন । লালসালু, কবর, আরেক ফাল্গুন, শেষের কবিতা, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তিনটি বই এরকম সব বই । আপনার অনার্স শেষ হয়ে গেলে এসব বই পড়ার সময় আর পাবেন না । অথচ এগুলো বিসিএস সহ অন্যান্য চাকুরির লিখিত পরীক্ষায় অনেক কাজে লাগে ।
##
কথা বলার দক্ষতা বৃদ্ধি করুন । আপনার সকল বন্ধু, সিনিয়র, জুনিয়র, শিক্ষক সবার সাথে সুন্দর সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করুন । হিংসা বিদ্বেষ পরিহার করুন । মানুষের সাফল্যে অনুপ্রানিত হোন, ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিন ।
##
ফেসবুক ও ইউটিউব সোশ্যাল মিডিয়াকে সঠিকভাবে ইউটিলাইজ করতে হবে । ফেসবুকের সকল চাকুরির গ্রুপে যুক্ত হবেন, পোস্ট গুলো দেখবেন হোমপেজ স্ক্রল করে । BCS, BANK, PRIMARY লিখলেই অসংখ্য গ্রুপ পেয়ে যাবেন ।
ইউটিউবে খুব সুন্দর ভিডিও তৈরি করে এমন চ্যানেলগুলো ফলো করবেন । অবসরে শুয়ে বসে থাকলে এগুলো দেখবেন । কয়েকটি চ্যানেলের নাম দিচ্ছি - Ki Keno Kivabe, Adyopanto, Eagle Eyes, Sorwar Alom, Enayet Chowdhury…
##
টিউশন করান যারা তারা ম্যাথ ও ইংলিশেই বেশি গুরুত্ব দিবেন, খুব ভালো প্রাকটিস হয়ে যাবে ।
##
প্রযুক্তিগত জ্ঞান বৃদ্ধি করুন । কম্পিউটার চালানো, ওয়ার্ড-এক্সেল-পাওয়ার পয়েন্টের কাজ শিখুন । সরকারি বেসরকারি ওয়েবসাইট ভিজিট করা শিখুন ও তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে পরিচিত হোন ।
##
৩য় ও ৪র্থ বর্ষে উঠলে ম্যাথ ও ইংরেজি ব্যাসিক ক্লিয়ার ও প্রাকটিস করতে পারেন । বিশেষ করে শুদ্ধ গ্রামারে ইংরেজিতে ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং শেখা খুব প্রয়োজনীয় ।
##
৩য় ও ৪র্থ বর্ষে যারা আছেন তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন কাজ হলো বাংলাদেশে কি কি চাকুরির সুযোগ আছে তা জানা, চাকুরির পরীক্ষার সিলেবাস সম্পর্কে টুকটাক ধারনা রাখা । যেন পাশ করে বের হওয়ার পরপরই আপনার চাকুরির বাজার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা হয় । তাহলে ক্যারিয়ার গোল সেট করতে সুবিধা হবে ।
এই কাজগুলো করলে আপনি নিজের অজান্তেই চাকুরির প্রস্তুতিতে এগিয়ে থাকবেন । অনেকেই বলতে পারেন অমুক তমুক ১ম বর্ষে কোচিং করতেছে, জব সল্যুশন শেষ করে ফেলতেছে । ট্রাস্ট মি এদের একাডেমিক ফেইলার হবার সম্ভাবনা বেশি । এসবের কোনো প্রয়োজন নাই ।
আমি অনার্স লাইফে কখনো কোনো চাকুরির বই কিনে পড়িনি । তাও আল্লাহ আমার সহায় হয়েছেন । চারপাশে এমন অনেককেই দেখেছি যারা সময়ের কাজ সময়ে করেনি । দিনশেষে ব্যর্থতার পাল্লা ভারি হয়েছে ।
আপনাদের সবার জন্য শুভকামনা রইলো । তবে বিসিএস ক্যাডার হওয়া আর দশটা চাকুরির মতই একটা চাকুরি । না হতে পারলে জীবন শেষ এমনটা ভাবার দরকার নাই । আপনি ব্যাংকার, ক্যাডার, উদ্যোক্তা সবটাই হতে পারেন, কোনো সমস্যা নাই । যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মে নিযুক্ত হবে এটাই চিরন্তন সত্য । আর দিনশেষ রিজিকের মালিক তো আল্লাহ ।
0 Comments