নিশাত রায়হান অমনি ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। বাবার চাকরিসূত্রে বেশ কয়েকটি জেলায় কেটেছে তার সোনালি শৈশব। সিলেট ও চট্টগ্রামে কয়েক বছর কাটিয়ে পড়াশোনার জন্য রাজধানীতে পাড়ি জমান। তিনি হলিক্রস স্কুল ও কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫ এবং বোর্ড স্কলারশিপসহ এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ বিভাগ থেকে সিজিপিএ ৩.৮৭ পেয়ে স্নাতক শেষ করেন। পরে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিষয়ে সিজিপিএ ৩.৭৮ নিয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডার পেয়েছেন, আপনার অনুভূতি কী?
নিশাত রায়হান অমনি: জীবনের প্রথম ও একমাত্র বিসিএস পরীক্ষায় পছন্দের ক্যাডার পাওয়ার খুশি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ক্যাডার চয়েস লিস্টে পুলিশ ক্যাডার প্রথম দিকে রাখার মূল মোটিভেশন ছিল পুলিশ সার্ভিসের ইউনিফর্ম! আমার একমাত্র বড় ভাই সেনাবাহিনীর একজন অফিসার হওয়ায় মনের ভেতর থেকে খুব করে চাইতাম কোনো একদিন আমি আর আমার ভাই আমাদের স্ব-স্ব ইউনিফর্ম পরে মাকে স্যালুট করবো। এ দৃশ্য মনে মনে চিন্তা করতাম আর অদ্ভুত একটা শক্তি অনুভব করতাম! পুলিশ ট্রেনিং মাঠের ঘোড়ার খুরের শব্দ যেন হৃদ্স্পন্দনে অনুভব করতাম! কত শত রাত নির্ঘুম কেটেছে এটা ভেবে যে, আর একটু কষ্ট করলেই, আর একটু পরিশ্রম করলেই আমি ছুঁয়ে দেখতে পারবো আমার স্বপ্নকে। আসলে মন থেকে চাইলে সৃষ্টিকর্তা কখনোই খালি হাতে ফেরান না।
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
নিশাত রায়হান অমনি: বিসিএস পরীক্ষার স্বপ্ন আসলে খুব আগে থেকে দেখেছি তা বলবো না। কারণ আমি নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন খুব কমই দেখেছি। আমাকে ঘিরে আমার মা-বাবার স্বপ্নগুলোই সব সময় আমার স্বপ্ন মনে হতো, এখনো হয়। আমার মায়ের প্রচণ্ড চাওয়া থেকেই মূলত বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া, পুরোটাই ছিল মায়ের স্বপ্নপূরণ। মাকে কখনোই কোনো বৈষয়িক জিনিস দিয়ে খুশি করা যেতো না। যেদিন বিসিএস পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশিত হয়, আমার মায়ের চোখে যে আনন্দাশ্রু দেখেছি—এর চেয়ে বেশি কিছু আমার পৃথিবীতে আসলেই আর চাওয়ার নেই! মায়ের চাওয়া মেয়ে হয়ে পূরণ করতে পারার যে আনন্দ, তা কোনো শব্দেই প্রকাশ করার মতো নয়।
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কিভাবে নিয়েছেন?
নিশাত রায়হান অমনি: আমার বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি খুবই কম সময়ের। জীবনে একটা বিসিএস দেবো—এ চিন্তা থেকে প্রস্তুতি শুরু করায় প্রথম থেকেই অত্যন্ত সিরিয়াসলি পড়াশোনা করেছি। নিয়মিত ঘণ্টা ধরে পড়তাম এবং যা-ই পড়তাম লিখে লিখে পড়ার চেষ্টা করতাম। সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাস ছোটবেলা থেকেই ছিল। যা প্রস্তুতি গ্রহণে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। এ ছাড়া আমি চেষ্টা করতাম, যা-ই পড়ি খুব বিস্তারিত পড়ার এবং বুঝে বুঝে পড়ার। আমার মনে হয়, বিসিএস পরীক্ষায় পাসের কোনো শর্টকাট নেই—বিষয়ভিত্তিক বইগুলো যতটা সম্ভব বিস্তারিত পড়া উচিত। এটি পরে লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভাতেও অনেক কাজে দেয়। আমার লিখিত পরীক্ষা ও ভাইবা প্রস্তুতিতে খুবই সহায়তা করেছে। আমি লিখিত পরীক্ষায় বিসিএস বিষয়ক অনেক ফেসবুক গ্রুপে ১০-১২টি পত্রিকা থেকে তথ্য নিয়ে প্রচুর হ্যান্ডনোট তৈরি করে করে পোস্ট করতাম। এতে অনেকের অনেক উপকার হয়েছে বলেও আমাকে জানাতেন। এই প্রক্রিয়ায় পড়াশোনা করে নিজের কনসেপ্টগুলোও একদম পরিষ্কার হয়ে যেত।
জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
নিশাত রায়হান অমনি: আমার জীবনে এখন পর্যন্ত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যত অর্জন তার সবটুকুর পেছনেই সব সময় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন আমার মা। কখনো সামনে থেকে কখনোবা পর্দার আড়াল থেকে। আমার মা বিশ্বাস করতেন আমি পারবো। মায়ের চাওয়া আর দোয়াই আমার পেছনের সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
নিশাত রায়হান অমনি: আমি একটা কথা সব সময় বিশ্বাস করি, মানুষ তার স্বপ্নের সমান নয় বরং তার চেষ্টার সমান বড়! কাজেই চেষ্টা, অধ্যবসায় আর ধৈর্যের কোনো বিকল্প নেই। যেহেতু বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাস অনেক বিস্তৃত; কাজেই প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ কৌশল অবলম্বন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিলেবাস এবং বিগত বছরের প্রশ্নের বিশ্লেষণ দিয়েই প্রস্তুতি শুরু করা উচিত। বিসিএস পরীক্ষায় সবচেয়ে কঠিন স্তর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। কাজেই বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি গ্রহণের সময় যে যে বিষয় কঠিন মনে হয়, তা বারবার পড়ে আয়ত্তে আনাটা জরুরি। এছাড়া প্রথম থেকেই সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে—এটি সার্বিক প্রস্তুতিতে অনেক সহযোগিতা করবে। কিছু কিছু মৌলিক বই পড়াটাও জরুরি। মোটকথা ধৈর্য ধরে নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগ রেখে সংকল্পবদ্ধ হয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করার মনোভাব রাখতে হবে।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
নিশাত রায়হান অমনি: আমি বরাবরই বর্তমানকে প্রাধান্য দেওয়া মানুষ। আপাতত পুরোপুরি একটা ঘোরের মধ্যে সময় যাচ্ছে! অপেক্ষা করছি কবে স্বপ্নের সেই ইউনিফর্ম পরে একজন মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে মানুষের জন্য কাজ করতে পারবো। সবার দোয়া ও ভালোবাসা নিয়ে সামনের পথ চলতে চাই।
0 Comments