বিসিএস লিখিত পরিক্ষার জন্য যেভাবে প্রিপারেশন নিবেন


বিসিএস লিখিত পরিক্ষার জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নিবেন-

★তিন ধাপ বিশিষ্ট বিসিএস পরীক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে লিখিত। লিখিত পরীক্ষায় যত বেশি নম্বর ওঠানো যাবে,ক্যাডার হওয়ার পথটা তত বেশি সুগম হবে। ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ নম্বর পেলেই পাশ করা যাবে।তবে ক্যাডার হওয়ার জন্য সাধারণত পাশ নম্বরের চেয়ে অনেক বেশি নম্বর প্রয়োজন হয়ে থাকে। লিখিত পরীক্ষায় খুব ভালো করার পর মৌখিক পরীক্ষায় মোটামুটি নম্বর পেলেও ক্যাডার পদ পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।সাম্প্রতিক বিসিএসগুলোতে ক্যাডার পদের পাশাপাশি অনেক নন-ক্যাডার পদেও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তাই,ভালো  লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে ক্যাডার কিংবা নন-ক্যাডারের যেকোনো একটি  চাকরি পাওয়ার দৌড়ে নিজেকে এগিয়ে রাখতে পারবেন।

★যেহেতু লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় খুবই কাছাকাছি, তাই শেষ সময়ে নতুন কিছু না পড়ে আগের পড়াকে বারবার রিভিশন দিতে হবে।ইংরেজিতে প্রায় পুরোটাই মৌলিক দক্ষতা নির্ভর পরীক্ষা হয়ে থাকে।এই মূহুর্তে ভোকাবুলারি, অনুবাদ কিংবা রিডিং কমপ্রিহেনশান না পড়ে কেবল রচনার পয়েন্ট ও তথ্যগুলো দেখে নিতে পারেন।বাংলার ক্ষেত্রে সাহিত্য, ব্যাকরণ ও রচনা অংশ একবার চোখ বুলিয়ে  নেবেন।বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে পড়ার শুরু আছে, কিন্তু শেষ নেই।তাই এখন সব পড়তে যেয়ে মাথা গরম না করে কেবল মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান এবং অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো দেখে যাবেন ।তথ্য-উপাত্তের কোনো নোট করা থাকলে তা রিভিশন দিন। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির ধারণাগত বিষয়সমূহ, সংশ্লিষ্ট সংজ্ঞা এবং সমসাময়িক বিষয়গুলোর প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ একবার পড়ে নেবেন।গাণিতিক যুক্তির সূত্রসমূহ এবং জ্যামিতি রিভিশন দিতে হবে। মানসিক দক্ষতার ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় নিয়ম-নীতিগুলো দেখে যাবেন।বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির অপেক্ষাকৃত কঠিন বিষয়গুলো শেষ সময়ে একবার রিভিশন দেবেন।

★অনেক প্রার্থী ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানে যথেষ্ট দুর্বল। তাই এই তিন বিষয়ে যারা খুব ভালো করতে পারবে,তারাই ক্যাডার হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকখানি এগিয়ে থাকবে। গণিত ও বিজ্ঞানে পূর্ণ নম্বর পাওয়ার সুযোগ থাকে।বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্য অংশেও ভালো নম্বর ওঠানো যায়।  আপনি যে বিষয়ে পারদর্শী  তাতে খুব বেশি নম্বর পাওয়ার চেষ্টা করবেন,যাতে কম পারদর্শী বিষয়ের ক্ষতি এখানে পুষিয়ে নিতে পারেন।

★সর্বশেষ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, বাজেট,উন্নয়ন কর্মকান্ড এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলির গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ বারবার রিভিশন দিতে হবে। এসব তথ্য-উপাত্ত বাংলা ও ইংরেজি রচনা,বাংলাদেশ বিষয়াবলি এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের উত্তরে ব্যবহার করতে পারবেন।

★পরীক্ষার হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সময় ব্যবস্হাপনা।লিখিত পরীক্ষায় ছোট-বড় এত বেশি প্রশ্নের উত্তর করতে হয় যে, সঠিক সময় পরিকল্পনার অভাবে অনেক প্রার্থীই বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর করার সময় পান না। এতে অন্যদের চেয়ে আপনি অনেক পিছিয়ে যাবেন।২০০ নম্বরের পরীক্ষায় প্রতি এক নম্বরের জন্য ১.২ মিনিট এবং ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় প্রতি এক নম্বরের জন্য ১.৮ মিনিট করে সময় পাবেন।প্রতি প্রশ্নের জন্য সময় সুনির্দিষ্ট রেখে উত্তর করলে সকল প্রশ্নের উত্তর যথাযথ সময়ে শেষ করা যাবে। তবে আপনি যদি কিছু প্রশ্নের উত্তর খুব ভালো জানেন এবং কিছু প্রশ্ন আনকমন থাকে,তাহলে জানা প্রশ্নগুলো কিছু বেশি সময় নিয়ে উত্তর করতে পারেন।অনেকেই বাংলা ও ইংরেজি রচনা লেখার জন্য শেষ দিকে পর্যাপ্ত সময় পান না।অথচ এই দু’টি রচনায় নব্বই নম্বর বরাদ্দ থাকে।প্রতিটি রচনার জন্য অন্তত এক ঘন্টা করে সময় রাখা উচিত। 

★খাতায় অপ্রয়োজনীয় তথ্য লেখা থেকে বিরত থাকুন। অনেকের মাঝেই লিখিত পরীক্ষায় অপ্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়ে পৃষ্ঠা ভরতি করার মানসিকতা কাজ করে,যা কার্যত হিতে বিপরীত হতে পারে। খুব দ্রুত লিখতে যেয়ে আপনার খাতার সৌন্দর্য যেমন বিনষ্ট হবে,তেমনি পরীক্ষক ও অগোছালো এবং অপ্রয়োজনীয় তথ্য পড়ে বিরক্ত হবেন।লিখিত পরীক্ষায় কোয়ান্টিটির চেয়ে কোয়ালিটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক প্রশ্নের মূলকথাকে ফোকাস করে টু দ্যা পয়েন্টে উত্তর করবেন।পরীক্ষক খাতার কিছু অংশ পড়েই আপনার দক্ষতা সম্পর্কে বুঝতে পারবেন।তাই পরীক্ষককে ইম্প্রেস করার জন্য অতিরিক্ত পৃষ্ঠা ভরতি করার কোনো প্রয়োজন নেই ।

★লিখিত পরীক্ষায় সুন্দর উপস্থাপন কৌশল,  ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং এবং খাতা সাজানো কাঙ্খিত নম্বর পেতে সহায়তা করে।খাতায় পেন্সিল দিয়ে মার্জিন টানুন।কালো ও নীল কালি ব্যবহার করবেন।চাইলে হাইলাইটারও ব্যবহার করতে পারেন।অতিরিক্ত শিটে পেন্সিল দিয়ে নম্বর দেবেন।এতে পরীক্ষা শেষে সহজেই খাতা গুছিয়ে নিতে পারবেন।

★লিখিত পরীক্ষায় তথ্যবহুল লেখার গুরুত্ব অনেক।বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ও রচনায় প্রাসঙ্গিক চিত্র, সারণি,মানচিত্র,উদ্ধৃতি ও পাদটীকা যত বেশি পারেন দেওয়ার চেষ্টা করবেন। বিজ্ঞানে সংকেত, গ্রাফ্,চার্ট ও চিত্রভিত্তিক উপস্হাপনা খুব জরুরী।

★আপনার হাতের লেখা যেন পরিচ্ছন্ন হয় সেটা খেয়াল রাখবেন।বাংলা বা ইংরেজি শব্দের বানান অবশ্যই নির্ভুল হতে হবে।সঠিকভাবে যতিচিহ্নের ব্যবহার করবেন।পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র ভালোভাবে বুঝতে হবে।অনেক কনফিউসিং (সংশয়মুলক) প্রশ্ন থাকে,যেগুলো না বুঝে উত্তর করলে কোনো নম্বরই পাবেন না।

★অবশ্যই সকল প্রশ্নের উত্তর করে আসবেন।লিখিত পরীক্ষায় অনেক কিছুই ধারণা করে নিজ থেকে লেখা যায়।আপনার শৈশব থেকে অর্জিত সকল জ্ঞানের সাথে সংযোগ করে কিছু না কিছু লেখার চেষ্টা  করবেন।লিখিত পরীক্ষায় যেহেতু নেগেটিভ মার্কিং নেই, তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।তবে মনগড়া কিংবা বানোয়াট তথ্য কখনোই দেবেন না, আপনার মিথ্যা তথ্য পরীক্ষক খুব সহজেই ধরে ফেলতে পারবেন।

★আবশ্যিক বিষয়সমূহের পরীক্ষা টানা নয় দিন অনুষ্ঠিত হবে।যদিও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির আগে দুই দিন গ্যাপ আছে।এই কয়েক দিন নিজেকে সুস্থ ও সতেজ রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন তিন-চার ঘন্টা লেখার অবসাদ, যাতায়াতের ক্লান্তি এবং পরীক্ষার চাপে লিখিত প্রার্থীদের বিশাল একটা শারীরিক ও মানসিক ধকল সামলাতে হয়।পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই পরীক্ষার আগের রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।আগের রাতে বেশি রিভিশন না দিয়ে নিজেকে ইতিবাচক ও প্রস্তুত রাখুন। দুশ্চিন্তামুক্ত এবং স্বাস্থ্য সচেতন থাকবেন।এই কয়েকদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দূরে থাকুন।পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশাপাশি থাকার চেষ্টা করবেন।হরতাল-অবরোধ কিংবা যানজটের কারণে সময়মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে হবে।

★লিখিত পরীক্ষা সংক্রান্ত পিএসসি’র নির্দেশনাসমূহ ভালোভাবে পড়ুন। নিষিদ্ধ কোনো সামগ্রী পরীক্ষার হলে নেওয়ার  সুযোগ নেই।পরীক্ষার শুরুতেই ওএমআরে প্রয়োজনীয় বৃত্তসমূহ সতর্কতার সাথে ভরাট করুন।অতিরিক্ত শিটের সংখ্যা ওএমআরে লিখতে ভুলবেন না।অন্তত দু'টি প্রবেশপত্র সাথে রাখবেন।

★পরীক্ষার হলে আত্নবিশ্বাসী থাকার চেষ্টা করুন।কখনোই হীনম্মন্যতায় ভুগবেন না।একটি পরীক্ষা খারাপ হলে হতাশ হবেন না।পরবর্তী পরীক্ষায় সেটা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করুন।একটি ভালো লিখিত পরীক্ষা আপনার জীবনের গতিপথ পাল্টে দেবে।আপনার সুন্দর ভবিষ্যতের চাবিকাঠি আপনার হাতেই।তাই নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করুন।চূড়ান্ত সফলতা আপনার সন্নিকটেই।সবার জন্য শুভকামনা। 

সোর্স- শাকের রিয়াজ

Post a Comment

0 Comments