কিভাবে নিবেন সহকারী পরিচালক পদের প্রিপারেশন

 ব্যাংক ও বিভিন্ন সংস্থার সহকারী পরিচালকের প্রস্তুতি(প্রিলি):

বেশি না, এইতো মাস খানেক আগেও ফেসবুক গ্রুপগুলোতে কেউ পরীক্ষা নিয়ে কথা বললে বিভিন্ন তথ্য জানতে চেয়ে কমেন্ট করতাম, “বাংলাদেশ ব্যাংকে কত পেলে ভাইভা দেয়া যাবে?” “রচনা কয় পৃষ্ঠা লিখতে হবে?” “পয়েন্ট করে লিখবো নাকি পয়েন্ট ছাড়া?” “ডাটা দেয়া লাগবে নাকি?” এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে বিরক্ত হতাম, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এসব প্রশ্নের উত্তর ফার্স্ট হ্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স ছাড়া কোনোভাবেই জানা সম্ভব না, কিংবা জানলেও আপনি সন্তুষ্ট হতে পারবেন না। তাই প্রথম যে কাজটা হচ্ছে ছোট-বড় সব গ্রেডের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। আপনার ইচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক তাহলে আপনার সবচেয়ে ভালো মডেল টেস্ট হলো বিভিন্ন ব্যাংকের ক্যাশ, অফিসার, সিনিয়র অফিসার পরীক্ষা দেয়া। তাহলেই আপনি আপনার অনেক না জানা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

সাধারণত এসব পরীক্ষার ৩টি ধাপ থাকে- প্রিলিমিনারি, লিখিত, ভাইভা। ৩টি ধাপ অতিক্রম করতে পারলেই কেবল আপনার চাকরি হবে। এই ক্ষেত্রে ১০টি প্রিলি পাশ করার চেয়ে, ১টি প্রিলি, লিখিত এবং ভাইভা পাশ করাটা বেশি ফলপ্রসূ। তাই প্রিপারেশন শুরুর কিছুদিন পরই লিখিত নিয়ে ভাবতে হবে। এইক্ষেত্রে নিজের উপর লোড কিছুটা কমানো যায় যেসব টপিক/সাবজেক্ট প্রিলি এবং লিখিতের জন্য একই সেসব আগে ঝালাই করে নিয়ে। যেমন ম্যাথ প্রিলি/লিখিত উভয় ক্ষেত্রেই থাকবে, তাই ম্যাথের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখা যায়। তাছাড়া নিয়মিত পত্রিকা পড়া। এর মাধ্যমে আপনার লেখার শব্দ খুঁজে পেতে সমস্যা হবে না, পাশাপাশি প্রিলিতে সাধারণ জ্ঞানেও এগিয়ে থাকবেন।

আজ শুধু প্রিলি প্রস্তুতি নিয়েই বলি, লিখিত নিয়ে নাহয় আরেকদিন লিখবো।

মোটামুটি সব প্রিলিতেই বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান, গণিত, আইসিটি’র উপরেই প্রশ্ন থাকে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান ও ইংরেজি সাহিত্যের উপর ২-১ টা প্রশ্ন থেকে থাকে। যদি আপনি বিসিএস প্রস্তুতি না নিয়ে থাকেন তাহলে এই ২-১ নাম্বারের জন্য চিন্তা করে কাজ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকে সাধারণত প্রিলিতে ৬০ এর উপর পেলেই নিশ্চিতভাবে পাশ করা যায়। কিন্তু অনেকেই বলে প্রিলিতে ৫৫-৬০ পাওয়ার মতো প্রিপারেশন হলেই আর না পড়ে লিখিত প্রিপারেশন নেয়া উচিত আসলে ব্যাপারটা বাস্তব ক্ষেত্রে একটি মানসিক বাঁধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরীক্ষা শেষে ৫৫-৬০ পাওয়ার মতো পরীক্ষা হলে আপনি কখনই শান্তিতে লিখিত প্রিপারেশন নিতে পারবেন না, একটা আশংকা কাজ করবেই আপনি আদৌ প্রিলিতে পাশ করবেন কিনা। এই আশংকায় লিখিত প্রিপারেশনও ঠিকমতো নেয়া হবেনা রেজাল্টের আগ পর্যন্ত। তাই সবসময় ৬৫+ পাওয়ার লক্ষ্য রাখা উচিত।

· বাংলার জন্য জর্জ এমপিথ্রি বা অগ্রদূত যেকোনো একটি ফলো করতে পারেন। আপনার হাতে থাকা বইটিই পড়ুন। শেষ হয়ে গেলে আবার রিভাইস দিন। রিভাইস দেয়ার সময় চ্যাপ্টার শেষে এমসিকিউ অনুশীলনে সময় যেসবে ভুল হচ্ছে সেসব দাগিয়ে রাখুন। যেহেতু রিভাইস দেয়ার পরও আপনার ভুল হচ্ছে সেহেতু সেসবে পরবর্তীতেও ভুল থাকার সম্ভবনা আছে। দাগিয়ে রাখলে পরীক্ষার আগে শুধু সেসব স্বল্প সময়ে দেখে নেয়া যায়। আর ব্যাংকের জন্য ব্যকরণ অংশের উপর বেশি জোর দিতে হবে।

· ইংরেজির জন্য English For Competitive Exam এর পাশাপাশি Cliff’s TOEFL বইটি একবার শেষ করে রাখা এবং ভোকাবুলারি ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করা উচিত। আপনার কখন কোথায় কাজে লাগবে নিজেও জানবেন না। দেখা গেলো আপনি সারাজীবন স্থলপথে যুদ্ধের জন্য ট্যাংক, কামান নিয়ে বসে ছিলেন কিন্তু আপনাকে নৌপথে আক্রমণ করে বসলো। তাই প্রস্তুতি থাকতে হবে সবদিকে। তাছাড়া ভোকাবুলারি সমৃদ্ধ হলে লিখিতের সময়ও শব্দচয়নে অনেক কাজে দেয়।

· সাধারণ জ্ঞানের জন্য দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি নিতে গেলে জর্জ এমপিথ্রি পড়া যায়, সময় স্বল্পতা থাকলে পরীক্ষার তারিখ হতে বিগত ৩ মাসের কারেন্ট এফেয়ার্স, চলতি বছরের সব চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করেও অনেক সময় কাজ হয়ে যায়। সাধারণ জ্ঞানের সমস্যা হচ্ছে আপনার মনে থাকবেনা তথ্য। এইক্ষেত্রে ৭ দিন পর পর বিগত ৭ দিনে কি পড়েছেন তা রিভাইস দিলে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। কারও ক্ষেত্রে ৭ দিন কাজ না করলে সময়টি কমিয়ে ৫ দিনে নিয়ে আসতে পারেন।

· গণিতের জন্য আপনি যখন বড় কোন বই অনুশীলন করতে যান সেই ক্ষেত্রে দেখা যায় ১ম চ্যাপ্টার শেষ করে, ২য়, ৩য় এভাবে শেষের দিকে যেতে যেতে ১ম চ্যাপ্টারে অনুশীলন করা ম্যাথগুলো আবার ভুলতে বসেন। তাই কার্যকরী উপায় হচ্ছে ১ম চ্যাপ্টারের প্রথম ৫টি ম্যাথ করে, ২য় চ্যাপ্টারে যাওয়া… এভাবে শেষ চ্যাপ্টারের প্রথম ৫টি ম্যাথ করে আবার ১ম চ্যাপ্টারে ফিরে এসে ৬ষ্ঠ ম্যাথ থেকে শুরু করা। এভাবে ইটারেশনটা তাড়াতাড়ি হয় বলে কোন চ্যাপ্টার অনেকদিন চর্চা না করার অভাবে ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। আমি নিজে কোনো নির্দিষ্ট বই সমাধান করিনি বলে বইয়ের নাম বললাম না।

· আইসিটির জন্য বিগত বছরের বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো ব্যাখ্যাসহ সমাধানই যথেষ্ট, এরপরও আপনি না পারলে মোটামুটি বাকিরাও পারবেনা নিশ্চিত থাকতে পারেন কারণ আইসিটির ক্ষেত্র বিশাল, এখানে কখন কোথা থেকে প্রশ্ন দিবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবুও “ইজি কম্পিউটার” বা “সেলফ সাজেশন” দেখতে পারেন।

পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়ার পর প্রথম দেখাতেই যেসব উত্তর করার মতো মনে হয় সেসব প্রশ্ন খুঁজে খুঁজে দাগিয়ে ফেলতে হবে, যেনো সময় স্বল্পতায় সেসব প্রশ্ন ছেড়ে আসতে না হয়। যেসব প্রশ্ন কিছুটা চিন্তা করতে হবে তা দাগিয়ে রাখবেন, আর যেসব প্রশ্ন দেখে মনে হবে কোনদিনও উত্তর করা সম্ভব না সেসব ক্রস দিয়ে দিবেন যেনো পরবর্তীতে ঐ প্রশ্ন পড়তে এসে আপনার কয়েক সেকেন্ড নষ্ট না হয়। তবে পরীক্ষার ১ ঘন্টা প্যানিকড হয়ে এক প্রশ্ন থেকে আরেক প্রশ্নে যাওয়ার চেয়ে ঐ ১ ঘন্টা উপভোগ করতে শেখাটা জরুরী। উপভোগ করার মানে এই নয় যে আবার পাশের সিটের সুন্দরীর সাথে গল্প করতে হবে, উপভোগ করার মানে Calm থেকে নিজের সর্বোচ্চ আউটপুটটা দিতে হবে প্রশ্ন যেমনই হোক না কেনো। যদি দেখেন সেই সর্বোচ্চ আউটপুটটাও অনেক কম হয়ে যাচ্ছে নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে যে বাকিদের অবস্থা আরও খারাপ, আপনি ঠিক পথেই আছেন।

লিখেছেন - 

Fahim Faisal

MBA 64D, IBA, University of Dhaka.

Recommended as Assistant Director, Bangladesh Bank (Merit Position: 06)

Recommended as Assistant Director, Prime Minister’s Office.

Post a Comment

0 Comments