পুলিশের এস আই নিয়োগের বিস্তারিত

পুলিশের এস আই নিয়োগের বিস্তারিত 

 'সেবার ব্রতে চাকরি' এই স্লোগানে প্রকাশিত হ


য়েছে বাংলাদেশ পুলিশের এস. আই (নিরস্ত্র) ৪০তম ব্যাচের নিয়োগের বিজ্ঞাপন। গতবছর ৩৯তম ক্যাডেট সাব-ইনস্পেকটর অব পুলিশ (নিরস্ত্র) তে চুড়ান্তভাবে নিয়োগ পেয়েছেন মোট ৮১৫ জন। তাঁরা সবাই সারদায় ট্রেনিং করছে। পুলিশের সার্জেন্ট নিয়োগের কার্যক্রম ও চলমান।

আজ আলোচনা করব প্রবর্তিত নতুন সিস্টেমের নিয়োগ পদ্ধতি। অনলাইন আবেদন থেকে শুরু করে ভাইভা, মেডিকেল, ভেরিফিকেশন পর্যন্ত সকল বিষয় সম্পর্কে একটা মৌলিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। আগেই বলে রাখি এই নিয়োগের প্রতিটি ধাপই নক আউট পর্ব। ওয়েববেজড স্ক্রিনিং থেকে শুরু করে শারীরিক যাচাই সক্ষমতা, লিখিত, কম্পিউটার টেস্ট, ভাইভা, পুলিশ ভেরিফিকেশন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মৌলিক প্রশিক্ষণ ইত্যাদি প্রতিটি ধাপই সফলতার সাথে পার করতে হবে। যেকোন পর্বের কোন একটা ধাপে ব্যর্থ হলেই আপনি বাদ পড়বেন।
১৯-২৭ বছর বয়সী স্নাতক ডিগ্রিধারী বাংলাদেশী, ৬/৬ দৃষ্টির অধিকারী, পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি উচ্চতার অবিবাহিত পুরুষ ও পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি উচ্চতার নারীরা প্রাথমিকভাবে আবেদন করতে পারবেন। স্বাভাবিক বুকের সাইজ ও ওজন থাকতে হবে। কম্পিউটারে যথেষ্ট প্রায়োগিক দক্ষতা থাকতে হবে। তবে সার্জেন্ট নিয়োগের জন্য ছেলেদের উচ্চতা পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি হতে হবে। মোটর সাইকেল চালাতে দক্ষ হতে হবে।
শারীরিক মাপ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তথ্য দিয়ে শারীরিক সক্ষমতার যাচাই পরীক্ষার জন্য (PET) অনলাইনে আবেদন করতে হবে। যোগ্য প্রার্থীরা একটা ইউজার আইডি দিয়ে ৪০ টাকা টেলিটক সিমের মাধ্যমে পরিশোধ করে ছবি ও স্বাক্ষর আপলোড দিয়ে ওয়েববেজড প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং এর জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত হবেন। ওয়েববেজড স্ক্রিনিং প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার ফলাফল ও উচ্চতার উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট সংখ্যক যোগ্য প্রার্থীদের শারীরিক মাপ ও কাগজপত্র যাচাইকরণসহ শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষার জন্য নির্বাচন করা হয় এবং পরীক্ষার তারিখ, কেন্দ্রের নামসহ অন্যান্য তথ্য সংবলিত এডমিট কার্ড দেয়।
পরামর্শঃ
সঠিক তথ্য দিয়ে ঠিকঠাক অনলাইনে আবেদন করতে হবে। উচ্চতার ক্ষেত্রে যারা অন্তত ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি কেবল তারাই আবেদন করবেন। ভুল তথ্য দিলে মাঠের প্রথমেই বাদ যাবেন। পরিবারের অনেকের তথ্য দিতে হয় যা লিখিত পরীক্ষায় পাশ করলে ভেরিফিকেশনের সময় যাচাই করা হয়। ফলে ভুল তথ্যে ঝামেলায় পড়তে পারেন। তাই নির্ভরযোগ্য ও সঠিক তথ্য দিবেন।
শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষাঃ
এই পরীক্ষা হয় তিন দিন। প্রার্থীদের নিজ রেঞ্জাধীন পরীক্ষাকেন্দ্রের মাঠে উপস্থিত থাকতে হয়। ৭টি ইভেন্ট যথা- দৌড়, লং জাম্প, হাই জাম্প, পুশ আপ, সিট আপ, ড্যাগিং ও রোপ ক্লাইমিং)-এ অংশগ্রহণ করতে হয়।
১ম দিন মাঠে ঢোকার শুরুতেই উচ্চতা মেপে মাঠে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর ওজন, দুই পায়ের মাঝখানের দূরত্ব ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেক করেই প্রথম দিন মাঠ শেষ।
২য় দিন মাঠের প্রথম কাজ ১৬০০ মিটার দোড় যা ৭.৩০ মিনিটে শেষ করতে হয়। এটাই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এই দিনের বাকী দুটি ইভেন্ট হলো হাই জাম্প ও লং জাম্প।
৩য় দিনের মাঠের শুরুতে পুশ আপ৷ তারপর সিট আপ, ড্রাগিং ও রোপ ক্লাইমিং। সবগুলো ইভেন্ট অতিক্রম প্রার্থীগণ লিখিত পরীক্ষার জন্য মনোনীত হবেন।
পরামর্শঃ
এই অংশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং হলো দোড়। মাঠে বাদ পড়ার সবচেয়ে বেশি এই অংশ থেকেই যায়। এর জন্য প্রয়োজন নিয়মিত অনুশীলন। ব্যক্তিভেদে কারো কাছে পুশ আপ ও সিট আপ ও চ্যালেঞ্জিং হয় যেটা মাঠে প্রত্যক্ষ করেছি। বাকী ইভেন্টগুলো সামান্য অনুশীলনেই আপনি রপ্ত করতে পারবেন।
লিখিত পরীক্ষাঃ
২৫০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হয়। বাংলা ৫০, ইংরেজি ৫০, সাধারণ (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক) ৫০, গণিত ৫০, মনস্তত্ত্ব ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। বাংলা ও ইংরেজি প্রথম দিন, সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক) দ্বিতীয় দিন, মনস্তত্ত্ব পরীক্ষা হয় তৃতীয় দিন।
পরামর্শঃ
মাঠের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলাটা এই ২৫০ নম্বর এই হয়ে থাকে। আপনার চাকরি পাওয়া বা না পাওয়া এই লিখিত পরীক্ষার নম্বরের উপর নির্ভর করবে। নিজ নিজ রেঞ্জ বা বিভাগে লিখিত পরীক্ষা হয়। বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক) অংশের কিছু কিছু সেকশনে একথায় উত্তর বা সংক্ষিপ্ত উত্তর চাওয়া হয় যেখানে শতভাগ নম্বর পাওয়া যায়। তাই এই অংশে ভালো করতে পারলে এগিয়ে থাকবেন। বর্ণনামূলক প্রশ্নে উত্তর প্রাসঙ্গিক ও যথাযথ হওয়া উচিত। অধিক লিখলে বেশি নম্বর পাবেন বা খাতা ওজন করে নম্বর দেওয়া হয় ঐ দিন শেষ। প্রাসঙ্গিক উক্তি, তথ্য ও গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করুন। বাংলা ও ইংরেজি বানানে সতর্ক হন। মনে রাখবেন যতই ভালো লেখেন না কেন বানান ভুল পেলে পরীক্ষকরা খাতা দেখে বিরক্ত হন ফলে নম্বর কমে যায়। পৃথিবীর সবকিছুই মুখস্থ করতে যাবেন না। এখানে ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং গুরুত্বপূর্ণ। নিজের কল্পনাশক্তি ব্যবহার করে বাংলা ও ইংরেজি অংশে নিজের মত করে বিভিন্ন বিষয়ে লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কিছু টেম্পলেট মুখস্থ রাখতে পারেন। যেমন বঙ্গবন্ধু বা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোন প্রশ্ন আসলে কোন উক্তি বা কবিতা দিয়ে শুরু করলে উত্তরটা যথাযথ হবে তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে পারেন। প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়টি বাংলাদেশ সংবিধান কোন ধারায় থাকলে তা উল্লেখ করতে ভুলবেন না। অর্থনৈতিক সমীক্ষা, বিবিএস এর কোন তথ্য জানা থাকলে তা প্রয়োগ করুন। লেখায় কালো কালির কলম ব্যবহার করুন। তবে উক্তি বা বিশেষ কোন তথ্যে নীল কালার ব্যবহার করতে পারেন। মানচিত্র বা ডায়াগ্রাম যথাযথ না পারলে এড়িয়ে যেতে পারেন তবে ভুল মানচিত্র বা ডায়াগ্রাম না দেওয়াই ভালো। ধারাবাহিক সমজাতীয় তথ্যের ক্ষেত্রে পাই চার্ট বা অন্য কোন চার্ট ব্যবহার করতে পারেন। গুগুল করলেই অনেক চার্ট পাবেন। কোন ধরনের তথ্যের জন্য কোন চার্ট ব্যবহার করবেন তা আগে থেকে পরিকল্পনা করে রাখুন এত করে পরীক্ষার হলে চাপ কমবে। গণিত ও মনস্তত্বে মোট ১০০ নম্বর। ব্যাসিক ভালো হলে এখানেও ভালো করতে পারলে এগিয়ে থাকবেন। গণিতের জন্য বোর্ড বইয়ের উপর গুরুত্ব দিন ও মনস্তত্বের জন্য বিসিএস সিলেবাস অনুসরণ করে অনুশীলন করুন।
কম্পিউটার টেস্টঃ
লিখিত পরীক্ষায় পাশ করা প্রার্থীদের ঢাকার আগারগাঁও এ ৫০ নম্বরের ব্যবহারিক পরীক্ষা হয়। এখানে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা ভাইভার জন্য নির্বাচিত হয়।
পরামর্শঃ
প্রতিটি ধাপের মত এটাও গুরুত্বপূর্ণ। পূর্বেই উল্লেখ করেছি এই প্রতিযোগিতায় প্রতিটি পর্বই নক আউট পর্ব। একবার বাদ পড়লে দ্বিতীয় বারের সুযোগ নাই। এখানে ৫০ নম্বর। ৫০% নম্বর না পেলে বাদ পড়বেন। ১০ টা এম. সি. কিউ, ১০ মিনিট। তারপর বাংলা ও ইংরেজির টাইপিং টেস্ট হিসেবে একটা করে অ্যাপ্লিকেশন লিখতে হয়৷ সেই সাথে মাইক্রোসফট এক্সেল ও পাওয়ারপয়েন্টের একটা করে মোট ৪ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। সময় ৩০ মিনিট। এই কাজগুলো খুব কঠিন না হলেও আধা ঘণ্টায় সম্পন্ন করতে একটু অনুশীলনের প্রয়োজন হবে।
ভাইভাঃ
ভাইভা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভাইভাতে প্রার্থীদের পোশাক-পরিচ্ছেদ, বুদ্ধিমত্তা, পঠিত বিষয়ে জ্ঞান, নিজ জেলা, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। পুলিশে কেন আসতে চান, পঠিত বিষয়ের সাথে পুলিশ পেশার সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য ইত্যাদি বিষয়ে নিজের যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে উত্তর দেওয়া ভালো। ভাইভা বোর্ড যে ভাষায় প্রশ্ন করবে (বাংলা বা ইংরেজি) সে ভাষাতেই উত্তর দেওয়া উচিত। যে বোর্ড মেম্বার প্রশ্ন করবে তাঁর দিকে তাকিয়ে (আই কন্টাক্ট) উত্তর দেওয়া বাঞ্চনীয়। আঞ্চলিক ভাষা পরিহার করে সুন্দর, গোছালো ও প্রাসঙ্গিক উত্তর দিতে হবে। প্রশ্নকর্তা পুরুষ বা মহিলা যেই হোক উভয়ের ক্ষেত্রেই 'স্যার' বলতে হবে। মহিলাদের ম্যাডাম বা ম্যাম বলা যাবে না। কোন উত্তর জানা না থাকলে দুঃখিত বলাই ভালো। বোর্ড মেম্বারদের সাথে তর্কে যাবেন না তবে যথার্থ যুক্তি থাকলে তা অনুমতি নিয়ে বিনয়ের সাথে বলতে পারেন। সর্বপরি, আপনার উপস্থিত বুদ্ধি, বাচনভঙ্গি, দৃষ্টিভঙ্গি, রুচিবোধ ইত্যাদি জানার জন্যই মূলত ভাইভা পরিক্ষা।
লিখেছেনঃ মোঃ নাহিদুল ইসলাম নাহিদ
এস.আই (নিরস্ত্র), ৩৯তম ব্যাচ ( সুপারিশ প্রাপ্ত)

Post a Comment

0 Comments