গ্যাসের চাকুরীর বিস্তারিত

 


সরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গ্যাস সেক্টরে চাকরি পাওয়ার স্বপ্ন অনেকেই দেখে থাকেন। যার প্রধান কারণ এখানে হালালভাবে বেতনের বাইরেও কম বেশি অনেক সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়৷ যারা পাওয়ার এক্সারসাইজ করার স্বপ দেখেন তাদের জন্য এই জব না সেটা আগেই বলে নিচ্ছি। তবে জবটা কতোটুকু শান্তির সেটা নির্ভর করছে অনেক আনুষঙ্গিক বিষয়ের উপর। তবে ওভারঅল কাজের প্রেসার অন্য অনেক জব এর তুলনায় কম বলা যায়। যাইহোক আমি কিন্তু এখানে টেকনিক্যাল বা হিসাব ক্যাডারদের প্রসঙ্গ আনছি না। আজ শুধু সাধারণ ক্যাডার নিয়ে কিছু কথা বলবো।

সম্প্রতি বাখরাবাদ গ্যাসে একটা সার্কুলার প্রকাশিত হয়েছে। চাকরির সুবাদে অনেকেই আমার কাছে এই জব সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন এবং কিভাবে প্রিপারেশন নেয়া যায় সেই ব্যাপারে দিক নির্দেশনা চেয়েছেন। প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি যে আমি দিক নির্দেশনা দানে অভিজ্ঞ কেউ না। Failure is the pillar of success প্রবাদ অনুযায়ী আমার পিলারের সংখ্যা গুনে শেষ করা যাবে না তবে সেই তুলনায় ছাদের সংখ্যা অপ্রতুল। আমার পরামর্শ অভিজ্ঞদের জন্য হয়তো কোনো কাজেই লাগবে না। যারা একেবারেই নতুন তাদের জন্য হয়তো কিছু কাজে আসবে। একজনও উপকৃত হলে আমার পোস্ট কাজে আসবে বলেই মনে করি।
গ্যাস সেক্টরে চাকরির সুযোগ সুবিধা কেমন:
>>বেতন সরকারি স্কেলেই পাবেন। বাড়ি ভাড়া আর মেডিক্যাল ভাতা সরকারি নিয়মেই। সাথে অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে গ্যাস বিল বাবদ বর্তমানে ১০৮০ টাকা পাওয়া যায় (দুই চুলা বাবদ যা আসে), ধোলাই ভাতা বাবদ ১৫০ টাকা পাওয়া যায়, লাঞ্চ ভাতারও ব্যবস্থা আছে। এটা কোম্পানিভেদে প্রতি কর্মদিবসের জন্য ৫০ থেকে ১৫০ টাকা করে হতে পারে বিজিডিসিএল এ ১০০ টাকা করে। বেতনের ব্যাপারটা যতদূর জানি পেট্রোবাংলার অধীনস্ত ১৩ টা কোম্পানিতেই সমান।
>>বছরে ৭ দিনের ছুটি সহ ১টা বেসিক পাওয়া যায় LFA হিসেবে।
>>প্রতি গ্রীষ্মে সামার লিভারিজ (পোষাক ভাতা) হিসেবে ভালো পরিমাণ অর্থ পাওয়া যায়।
>>প্রতি এক বছর অন্তর অন্তর শীতকালীন পোষাক ভাতা পাওয়া যায়।
>>দুইটা উৎসব বোনাস আর বৈশাখী বোনাস অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতোই পাবেন।
>>বাৎসরিক মুনাফার একটা অংশ সকল অফিসার-স্টাফদের মাঝে বন্টন করা হয়।
>>কোম্পানীর পার্ফরম্যান্স অনুযায়ী বছরের বিভিন্ন সময় কোম্পানি তার কর্মীদের এক্স গ্রাশিয়া, ইন্সেন্টিভ দিয়ে থাকে। কোম্পানি ভেদে কম বেশী বা শূন্যও হতে পারে।
>>কম্পিউটার লোন, মোটর সাইকেল লোন, গৃহ নির্মাণ লোনের সুবিধা তো থাকছেই।
>>কোম্পানিতে বিদ্যমান থাকা সাপেক্ষে আবাসন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।
>>ছুটির ব্যাপারটা অন্যান্য সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত চাকরির মতোই
[বি:দ্র: উপরোক্ত সুবিধাসমূহ কোম্পানি ভেদে কম বেশী হতে পারে। কর্তৃপক্ষ চাইলে যে কোনো সময় এই সুবিধা পরিবর্তন বা বন্ধ করেও দিতে পারে। বর্তমানে আছে বিধায় লিখলাম।]
বাখরাবাদ গ্যাস নিয়ে কিছু কথা:
এটা একটা ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। অনেকে এটাকে ফিল্ড মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ড বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড এর অধীনস্ত একটা গ্যাস উত্তোলন কোম্পানি। বাখরাবাদ গ্যাস আগে গ্যাস উত্তোলন, ট্রান্সমিশন, ডিস্ট্রিবিউশন করলেও বর্তমানে শুধু ডিস্ট্রিবিউশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফেনী নিয়ে এই কোম্পানির কার্যক্রম। এই এলাকা গুলোতে বর্তমানে গ্যাস সরবরাহ করে থাকে। প্রধান কার্যালয় কুমিল্লাতে। প্রধান কার্যালয়ের ভিতরেই আবাসিক কোয়ার্টার, ক্লাব, খেলার মাঠ, মসজিদ রয়েছে। পাশেই বাখরাবাদের স্কুলও আছে।
সাধারণ ক্যাডারদের পোস্টিং:
আঞ্চলিক অফিসগুলোতে সাধারণ ক্যাডারের পোস্ট তেমন না থাকায় সাধারণ ক্যাডারদের পোস্টিং সাধারণত কুমিল্লা হেড অফিসেই হয়ে থাকে। তবে এটা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত, চাইলে আঞ্চলিক অফিস (ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং নোয়াখালী, ঢাকা)-তে পোস্টিং দিতে পারে। সাধারণত শুরুর দিকে কুমিল্লাতেই দিয়ে থাকে।
প্রস্তুতি কিভাবে নিবেন:
প্রশ্নটা বহুল প্রচলিত হলেও এর উত্তরটা খুব সংক্ষেপেই দেয়া যায়। চেষ্টা করছি কিছুটা।
বিভিন্ন গ্যাস কোম্পানি টেন্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্ব দিয়ে থাকে তাই প্রশ্নের ধরণেও ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। কেউ শুধু MCQ নেয় যেমন তিতাস নিয়েছিলো। শেষবার ৬০ টা MCQ আর তার আগের বার ৮০ টা MCQ নিয়েছিলো। তবে বেশির ভাগ গ্যাস কোম্পানি গুলোই MCQ+written একসাথে নিয়ে থাকে। বাখরাবাদ একসাথেই নিয়ে থাকে সাধারণত। গতবার এফবিএস নিয়েছিলো। MCQ ৩০ নম্বর আর লিখিত ৭০ এর ছিলো। এইবার টেন্ডার হলে জানা যাবে কারা নিবে। তবে সেই আশায় বসে না থেকে একটা সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া যেতে পারে। যাতে পরীক্ষা যেই নিক পরীক্ষা ভালো দিতে পারবেন।
সবার প্রথমে গ্যাসের বিগত প্রশ্ন পাওয়া যায় এমন বই কিনবেন। সাধারণ ক্যাডারের জন্য 'ক্যাম্পাস' আর 'এমিনেন্ট' এর দুইটা বই দেখেছিলাম, আর আছে কিনা আমার জানা নেই। বই দুইটা সংগ্রহ করে পড়া শুরু করে দিন। এতে করে প্রশ্ন কেমন হতে পারে, পরীক্ষায় কি কি আসতে পারে তার একটা স্বচ্ছ ধারণা পেয়ে যাবেন, তবে অবশ্যই এমসিকিউ আর রিটেন দুইটারই সমন্বিত প্রস্তুতি নিবেন।
গ্যাসের বিগত প্রশ্ন শেষ করার পর FBS কে ফোকাস করে FBS, IBA এর সাম্প্রতিক প্রশ্ন গুলো পড়লে অনেক কমন পাবেন ইন শা আল্লাহ। আর কারেন্ট এফেয়ার্স তো মাস্ট। গ্যাসের প্রশ্ন বেশিরভাগই রিপিট প্রশ্ন হয়। আর যাদের জব সলিউশন মুখস্ত তারা এমসিকিউতে আটকাবে না বলেই আমার বিশ্বাস।
এমসিকিউ এর জন্য সমন্বিত প্রস্তুতি নিলে আর আলাদা সাবজেক্টিভ প্রস্তুতি না নিলেও আপনি মোটামুটি ভালো করবেন।
আরো অধিকতর ভালো করতে সাব্জেক্টিভ গুলো যেভাবে আগাতে পারেন:
বাংলা:
সাহিত্য তেমন বেশি আসে না, আসলে বিগত সালের গুলোই আসে। ব্যাকরণের জন্য ৯ম শ্রেণির নতুন ব্যাকরণ বই থেকে বা পছন্দের অন্য বই থেকে ব্যাকরণ এর নিয়ম কানুন গুলা দেখতে পারেন।
ইংরেজি:
আইবিএ প্রশ্ন করলে fill in the gap, synonyms, antonyms, replacing phase এগুলো দেয় বেশি। শুধু দেয় না, দিতেই থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই টানা ৫ টা করে একই ধাঁচের প্রশ্ন দেয়। এফবিএস সাধারণত মিক্স করেই দেয়। সাহিত্য কম আসে। গ্রামার থেকে preposition, right form of verb, voice, narration, subject verb agreement এর নিয়মাবলি দেখতে ভুল করবেন না৷ বাকী টপিকগুলো বিগত প্রশ্ন থেকেই হয়ে যাবে।
ম্যাথ:
ম্যাথের খুব বেশি কঠিন আসে না। FBS, IBA এগুলার বিগত ম্যাথ ভালো করে বুঝে পড়লেই হবে৷ বেসিক ভালো থাকলে ম্যাথে সমস্যা হবে না।
সাধারণ জ্ঞান:
কারেন্ট এফেয়ার্স তো বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি গতানুগতিক ধারার প্রশ্ন গুলো বেশি আসে যেমন- রাজধানী, মুদ্রা, সদস্য, প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট, এসডিজি ইত্যাদি যেটা জব সলিউশন আর সাম্প্রতিক ইস্যু গুলো থেকেই কাভার হবে। এখানে একটা বিষয় অতিরিক্ত জানতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদ/জ্বালানি (তেল, গ্যাস) ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য যেমন গ্যাস ক্ষেত্র কয়টা, কোনটা কোথায়, কোনটা বড়, তেল গ্যাস মজুদ/উৎপাদন/আমদানিতে শীর্ষে কোন দেশ ইত্যাদি টাইপ প্রশ্ন জানা লাগবে।
আইসিটি:
এখানে কিছু কমন টপিক দেখে যাবেন যেমন: এম এস অফিস শর্টকার্ট কি সমূহ, মডিফায়ার শর্টকার্ট, ফাংশন কী এর ব্যবহার, পূর্ণরূপ, নাম্বার কনভার্সন (বাইনারি-ডেসিমাল ব্লা ব্লা), মেমরি সাইজ ইত্যাদি। এগুলো অনেক আসে। গতবার পিজিসিএল এ এম এস এক্সেল রিলেটেড অনেক প্রশ্ন এসেছিলো।
এবার রিটেন নিয়ে কিছু বলি:
রিটেনের টপিক ভিন্ন ভিন্ন হতেই পারে। তবে বেসিক কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে। চিঠির ফরম্যাট দেখে যেতে হবে। ভাষাটা কেমন হবে সেটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গতবার বিজিডিসিএল এ একটা শোকজ নোটিস এসেছিলো। অনুরূপ ভাবে গ্যাস পূন:সংযোগ চেয়ে পত্র, প্রিপেইড মিটার স্থাপন, অবৈধ গ্যাস সংক্রান্ত অভিযোগ পত্র, গ্যাস লাইন মেরামত-এই ধরনের সহ অন্যান্য বিভিন্ন সরকারি পত্র লেখার ধরণ দেখে যেতে পারেন।
অনুবাদ খুবই কমন একটা টপিক। ইটুবি বা বিটুই বা দুইটাই আসতে পারে। নিয়মিত চর্চা করলে এখানে ভালো করতে পারবেন।
রিটেন ম্যাথের জন্য ফ্যাকাল্টি বেজড ম্যাথ/ আরিফুর রহমানের রিটেন ম্যাথ বই থেকে প্র্যাক্টিস করতে পারেন। অথবা অন্য বই থেকেও প্র্যাক্টিস করতে পারেন। বেসিক স্ট্রং করতে হবে।
ফোকাস রাইটিং গতবার বিজিডিসিএল এ আসে নাই তবে সামনের বার আসতেও পারে। এখানে না আসলেও অন্যান্য পরীক্ষায় অবশ্যই কাজে লাগবে। এক্ষেত্রে লেখার জায়গা সীমিত হওয়ায় মূল বিষয়গুলো সংক্ষেপে তুলে ধরতে হবে। প্রয়োজনীয় ডেটা, উক্তি ভালো নাম্বার পেতে সাহায্য করে। একটু নীল কালির ব্যবহার, আন্ডারলাইনিং ইত্যাদি খুবই কাজের। এনার্জি/ প্রাকৃতিক সম্পদ সংক্রান্ত ফোকাসগুলো অবশ্যই দেখে যাবেন। এ সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য নোট করে রাখলে যেকোনো রচনায় কাজে লাগাতে পারবেন।
ইদানিং অনেক পরীক্ষায়ই লিখিত অংশে সাধারণ জ্ঞান আসতেছে। এটার যেহেতু কোনো সিলেবাস নাই তাই সাম্প্রতিক ঘটনা আর জব সলিউশনের উপর নির্ভর করেও অনেকটা ভালো করা সম্ভব।
আল-আমীন সামি
সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে গ্যাসের পরীক্ষা সমন্বিত নেয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। বর্তমানে অনেককেই দেখেছি যারা একাধিক কোম্পানিতে টিকছেন। ফলে অনেক পোস্ট ফাকা থেকে যায় সমন্বিত হলে অনেকের জন্যে জব পাওয়াটা ইজি হয়ে যাবে। যেমনটা কম্বাইন্ড ব্যাংকে হচ্ছে। তো আর অপেক্ষা কেনো? লেগে পড়ুন আজই।
একটা সম্পূরক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি যেটা অনেকেই করছেন। গ্যাস শেষ হলে চাকরি থাকবে কিনা?
উ: বর্তমান গ্যাসের মজুদ আগামী ৯-১০ বছরে শেষ হবে জেনেই অনেকে এই প্রশ্ন করছেন। বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাসের পাশাপাশি এল এন জি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে যেটা ইম্পোর্ট করে আনতে হয়। ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলোর কাজ গ্যাস সরবরাহ করা, উৎপাদন/ উত্তোলন করা না। সুতরাং মজুদ শেষ হলে চাকরি শেষ এমনটা ভাবার কারণ নেই। গ্যাস এর রিজার্ভ শেষ হলে এল এন জি ইম্পোর্ট করে এই ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির মাধ্যমেই কিন্তু সরবরাহ করতে হবে। সুতরাং ঐ বিষয়ে চিন্তা না করলেও চলবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আর আগামীকাল সবসময়ই অনিশ্চিত তবুও আমরা কত কি প্লান করে রাখি!
যাইহোক, হয়তো খুব একটা গুছিয়ে লিখতে পারিনি। কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে করতে পারেন (কনফিডেনশিয়াল কিছু না অবশ্যই)। জানা থাকলে জানানোর চেষ্টা করবো ইন শা আল্লাহ।

Post a Comment

0 Comments